ভালোবাসার গল্প।পর্ব ৪
গল্প: ভালোবাসা
পর্ব:৪
সময়ের স্রোত যেন থেমে থাকে না। ফাতেমা শুধু
সংসারকে নিয়ে ভালো আছে, আমি ভালো আছি
শ্রুতিকে নিয়ে। ইদানীং শ্রুতির বেশ আবদার। টাকা-
পয়সার কমতি নেই বিধায় কখনো দিতে গড়িমসি করি না।
সবকিছু তো শ্রুতির জন্য।
ভীষণ জ্বরে পরে গেলাম। আমার জ্ঞান ছিলো না। শুধু
এতটুকু মনে আছে ফাতেমা আমাকে নিয়ে বিছানায়
শুইয়ে দিয়েছে। এই প্রথম ফাতেমা আমাকে স্পর্শ
করেছে। তাও অনিচ্ছাকৃত।
বাবা তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকলেন। ডাক্তারবাবু
আসলেন, ব্যবস্থাপত্র দিয়ে চলে গেলেন। সারারাত
জ্ঞান ছিলো না আমার। চিন্তায় চিন্তায় হয়তো এমনটা
হয়ে গেছি।
পরদিন অনেক সুস্থ হয়ে বিছানার উপরে বসে আছি।
গত একবছরে একদিন রাতেও বিছানায় ঘুমাইনি।
ফাতেমাকে আমার বড়ই আত্মীয় মনে হয় বিধায় তাকে
সেখানেই থাকতে দিয়েছি।
আমি বিছানায় বসে আছি দেখে বাবা ঘরে ঢুকলেন।
ফাতেমা রান্না কাজে রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার
করছে। একবার ওর দু'চোখ দেখে ফোলা ফোলা মনে
হলো।
বাবা আমার কপালে হাত দিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা
করে বললেন,
- বাবা এখন কেমন আছিস?
- আমি এখন অনেকটাই সুস্থ বাবা।
বাবা আমার খুব কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
- ফাতেমা সারারাত তোর শিউরে জেগে জেগে
জলপট্টি দিয়েছে। কেঁদেছে মেয়েটা। তোর জীবন ধন্য
রে বাবা।
বাবার কথা শুনে বেশ খানিকটা অবাক হলাম। বাবা
আমার কাছ থেকে চলে গেল। আমি জানি ফাতেমা
আমাকে কতটা ভালোবাসে। তাই বলে আমার জন্য
এতকিছু কেন সহ্য করবে?
আমি অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। আজকে
সবকিছু নিজেকেই খুঁজে নিতে হলো। টাইটা বাঁধার সময়
নাস্তা নিয়ে ফাতেমা এসে বললো,
- আজ অফিস না গেলেও পারেন। এখনো জ্বর পুরোটা
সাড়ে নি।
বিয়ের রাতের পর আজই প্রথম মুখ খুললো ফাতেমা। তাও
একেবারে মাথা নিচু করে। আমি বললাম,
- সকাল সাড়ে ১১টায় একটা জরুরী মিটিং আছে। যেতেই
হবে। তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।
- আমি তো ভেবেছি আজ যাবেন না অফিস।
অন্যমনস্ক অবস্থায় কথাটুকু শেষ করে রান্নাঘরে চলে
গেল। আজকে ভাপা পিঠা বানিয়েছে ফাতেমা। ইশ
কতদিন খাইনি। সাথে এত বাটি পায়েশও দিয়ে গেছে।
চুপচাপ ভালো ছেলের মতন খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
এভাবে কখনো পেট পুরে খাইনি। বাইরে ভাপা পিঠার
স্বাদ আর ঘরে বানানো ভাপা পিঠা বানানোর স্বাদের
মধ্যে পার্থক্য দেখলাম।
তাছাড়া বেশ ভালো পায়েশ তৈরি করতে পারে
ফাতেমা।
আজকে হয়তো নিজে ড্রাইভ করে যাবো না। মাথাটা
এখনো ঘুরছে। ড্রাইভার চাচাকে বললাম অফিসে নিয়ে
যাবার জন্য। নিচে নেমে দেখে তিনি গাড়ি নিয়ে
অপেক্ষা করছেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিচ থেকে ছাদের
উপরে তাকালাম, ফাতেমা ছাদ থেকে অপলক দৃষ্টিতে
আমাকে দেখছে। চোখাচোখি হবার আগেই চোখ
ফিরিয়ে নিলো।
.
ঢাকা শহরে জ্যামের অস্তিত্ব খুব বেশি। ১০মিনিট ধরে
জ্যামে আটকা পরে আছি। হঠাৎ চোখ গেল একটু দূরের
একটা রিকশায়। শ্রুতি মনে হচ্ছে, নাহ! কিছুক্ষণ ভালো
করে পরীক্ষা করে বুঝলাম ওটা শ্রুতি। তবুও চোখকে
অবিশ্বাস করে ফোন দিলাম শ্রুতিকে। আমি স্পষ্ট
দেখলাম ফোনটা বের করে কেটে দিলো।
শ্রুতির পাশে একটা ছেলে। ওরা দু'জনে খুব ক্লোসড
অবস্থায় ছিলো। আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরঝর বেয়ে
পড়লো। ছেলেটাকে আমি চিনি। ছেলেটা একবার আমার
অফিসে এসেছিলো ওর বাবার কোম্পানীর সাথে ডিল
করার জন্য।
ওর একটা কার্ড আমার কাছে থাকার কথা। অফিসে
পৌঁছে ছেলেটাকে আমার অফিসে আসার জন্য অনুরোধ
করলাম। যোহরের পর আসতে চাইলো। আমি অপেক্ষায়
আছি, রুমে ঢোকার পূর্বে আমার কাছে অনুমতি চাইলো।
আমি ওকে আসতে বললাম, কুশল বিনিময়ের পর,
- একটা কথা আপনার কাছে জানার ছিলো, যদি কিছু
মনে না করেন তো।
- বলেন, সমস্যা নেই।
- আসলে শ্রুতিকে আপনি কতদিন থেকে চেনেন?
- আমাদের রিলেশন দু'বছরের।
- রিলেশন বলতে?
- মানে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।
- ওহ
আমাদের কথা চলাকালীন মজিদ চাচা এসে কফি দিয়ে
গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে শ্রুতিও আমার অফিসে এসে
উপস্থিত। আমার পাশে ছেলেটাকে দেখে চমকে উঠলো।
আমি শ্রুতিকেও বসতে বললাম,
- তুমি খুব অবাক হচ্ছো তাই না শ্রুতি?
শ্রুতি কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে চুপ করে আছে।
ছেলেটাও বেশ অবাক হয়েছে শ্রুতিকে আমার অফিসে
আসতে দেখে।
- রোহান সাহেব কি হচ্ছে এসব? শ্রুতি, শ্রুতি এখানে
কেন?
- সেটা শ্রুতি ভালো জানে। জানেন তো, আমি
পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি গত একবছর হলো।
শ্রুতিকে ভালোবাসি বিধায় আমার স্ত্রীর গায়ে
একবার স্পর্শও করি নি। কিন্তু শ্রুতি আমাকে ঠকালো।
শ্রুতি আমি তোমাকে আর দেখতে চাই না। তুমি চলে
যাও, আর ছিয়াম সাহেব, হয়তো আমার সাথে শ্রুতি
অভিনয় করতে পারে কিন্তু আপনাকে সে সত্যি সত্যি
হয়তো ভালোবাসে। আপনারা দু'জন সুখী হন।
আমার কথা শুনে ছিয়াম সাহেব অবাক হয়েছেন। শ্রুতি
যে তাকেও ঠকিয়েছে। না জানি আরো কত ছেলেকে
এভাবে ঠকিয়েছে!
শ্রুতি চলে যাবার সময় পিছনে ফিরে একবার তাকিয়ে
কড়জোড়ে চোখের অশ্রু ফেলে বললো,
- আমাকে ক্ষমা করো রোহান। আমি তোমার সাথে
অন্যায় করেছি। তুমিও তো আমাকে বলোনি তুমি বিয়ে
করেও স্ত্রীর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করছো। যাইহোক, তুমি
তোমার স্ত্রীকে নিয়ে সুখে থেক।
আজ এই প্রথম শ্রুতির উপর প্রচণ্ড রাগ হলেও শেষ
বাক্যগুলো হৃদয়ে দুলছে। হৃদয়ের একপাশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে
গেছে। যার জন্য নিজের স্ত্রী থেকে দূরে সে কিনা
আমার সাথে ছল করেছে! ভাবতেই চোখ ঝরঝর করে অশ্রু
কনা ফ্লোর স্পর্শ করেছে।
.
বাড়িতে এসেই দেখলাম ফাতেমা আজ সোফায়
ঘুমিয়েছে। বুঝতে বাকি রইলো না ব্যাপারটা। আমি
অসুস্থ দেখে হয়তো বিছানায় শোয়ার অনুমতি দিয়েছে।
রাতের খাবার খেয়ে ছাদে গেলাম। এখনো চোখ দিয়ে
পানি ঝরছে।
এ পানি ঝরার কারণ শ্রুতি। এই মেয়েটাকে এত
ভালোবাসলাম, যার কারণে নিজের স্ত্রীর সাথে ছল
করলাম সে কিনা আজ!
আমি ভাবতে পারছি না। ফাতেমার সাথে খুব অন্যায়
করে ফেলেছি। মেয়েটা আমাকে ক্ষমা করবে কিনা
জানি নাহ। তবে ওর কাছে আমার ক্ষমা চাইতেই হবে।
আজকেই ওর ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিব। কিন্তু সে
তো ঘুমিয়ে পরেছে। মনে মনে দুষ্টুমি আঁটলাম।
সোজা ঘরে গিয়ে দেখলাম জানালা খোলা। চাঁদের মৃদু
আলো এসে পৌঁছেছে ফাতেমার শ্যামবর্ণ মুখখানায়।
আমি ওকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় শোয়ালাম।
মনে হয় টের পায়নি। আমি আলতো করে ওর ঠোঁটে আমার
ঠোঁট দু'টো রেখে হালকা স্পর্শ করে ভালেবাসা ছড়িয়ে
দিলাম।
আমার স্পর্শ পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে বসার চেষ্টা করে
ব্যর্থ হলো। কারণ ওর দু'হাত আমার দু'হাতে বন্ধি।
ভয়ার্ত চোখে বললো,
- কি করছেন আপনি?
- যা করছি ঠিক করছি।
- আপনার মনে হয় মাথা ঠিক নেই।
- আমি ঠিক আছি ফাতেমা।
শেষ ৪টা শব্দ উচ্চারণ করে আপাতত আমার আবদ্ধ থেকে
মুক্তি দিলাম। ফাতেমা বললো,
- আপনি আজ বিছানায় ঘুমাবেন। আপনি এখনো অসুস্থ।
আমি বরং সোফায় যাই।
ফাতেমা যাবার উপক্রম হবার সাথে সাথে আমি ওর
হাতটা ধরে কাছে টেনে নিলাম,
- এ কি করছেন রোহান বাবু?
ছলছল চোখে বললাম,
- ফাতেমা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি আমাকে
এত ভালোবাসো আর আমি তোমার ভালেবাসাকে
অগ্রাহ্য করে অন্য একটা.....!
কথাটা বলতেই থেমে গেলাম। আমি স্পষ্ট দেখলাম
ফাতেমা কাঁদছে। জানি না এ কান্না সুখের নাকি
দুঃখের।
- শ্রুতি বুঝি চলে গেছে?
আমি ফাতেমার কথায় চুপ করে রইলাম। ফাতেমা
কিছুক্ষণ বাদে বললো,
- আমি জানতাম রোহান বাবু, আমার স্বামী আমার কাছে
একদিন ঠিকই ফিরে আসবে। আমি আল্লাহকে খুব ভরসা
করি জানেন তো।
- তুমি আমায় ক্ষমা করেছো তো ফাতেমা?
- ছিহ! এভাবে বলবেন না প্লিজ।
- ফাতেমা খুব খুব ভালো মেয়ে। চলো না আমরা নতুন করে
একটা সোনার সংসার গড়ে তুলি? আর হ্যাঁ আজ থেকে
আপনি নয়, শুধু তুমি। তুমি শব্দটা তোমাকে আমার আরো
কাছে টানবে ফাতেমা।
ফাতেমা আমার বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। আমিও আমার
ভুল বুঝতে পেরে বাইরের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি।
একটা ভুল জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে মনটাকে
হালকা লাগছে।
এ রাতেই ফাতেমাকে পত্নীরুপে কাছে টেনে দু'জন
দু'জনার ভালেবাসায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। শেষরাতে
পবিত্রতা অর্জন করে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া স্বরুপ
দু'রাকাআত করে নামায পড়েছি।
(চলবে)
পর্ব:৪
সময়ের স্রোত যেন থেমে থাকে না। ফাতেমা শুধু
সংসারকে নিয়ে ভালো আছে, আমি ভালো আছি
শ্রুতিকে নিয়ে। ইদানীং শ্রুতির বেশ আবদার। টাকা-
পয়সার কমতি নেই বিধায় কখনো দিতে গড়িমসি করি না।
সবকিছু তো শ্রুতির জন্য।
ভীষণ জ্বরে পরে গেলাম। আমার জ্ঞান ছিলো না। শুধু
এতটুকু মনে আছে ফাতেমা আমাকে নিয়ে বিছানায়
শুইয়ে দিয়েছে। এই প্রথম ফাতেমা আমাকে স্পর্শ
করেছে। তাও অনিচ্ছাকৃত।
বাবা তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকলেন। ডাক্তারবাবু
আসলেন, ব্যবস্থাপত্র দিয়ে চলে গেলেন। সারারাত
জ্ঞান ছিলো না আমার। চিন্তায় চিন্তায় হয়তো এমনটা
হয়ে গেছি।
পরদিন অনেক সুস্থ হয়ে বিছানার উপরে বসে আছি।
গত একবছরে একদিন রাতেও বিছানায় ঘুমাইনি।
ফাতেমাকে আমার বড়ই আত্মীয় মনে হয় বিধায় তাকে
সেখানেই থাকতে দিয়েছি।
আমি বিছানায় বসে আছি দেখে বাবা ঘরে ঢুকলেন।
ফাতেমা রান্না কাজে রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার
করছে। একবার ওর দু'চোখ দেখে ফোলা ফোলা মনে
হলো।
বাবা আমার কপালে হাত দিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা
করে বললেন,
- বাবা এখন কেমন আছিস?
- আমি এখন অনেকটাই সুস্থ বাবা।
বাবা আমার খুব কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
- ফাতেমা সারারাত তোর শিউরে জেগে জেগে
জলপট্টি দিয়েছে। কেঁদেছে মেয়েটা। তোর জীবন ধন্য
রে বাবা।
বাবার কথা শুনে বেশ খানিকটা অবাক হলাম। বাবা
আমার কাছ থেকে চলে গেল। আমি জানি ফাতেমা
আমাকে কতটা ভালোবাসে। তাই বলে আমার জন্য
এতকিছু কেন সহ্য করবে?
আমি অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। আজকে
সবকিছু নিজেকেই খুঁজে নিতে হলো। টাইটা বাঁধার সময়
নাস্তা নিয়ে ফাতেমা এসে বললো,
- আজ অফিস না গেলেও পারেন। এখনো জ্বর পুরোটা
সাড়ে নি।
বিয়ের রাতের পর আজই প্রথম মুখ খুললো ফাতেমা। তাও
একেবারে মাথা নিচু করে। আমি বললাম,
- সকাল সাড়ে ১১টায় একটা জরুরী মিটিং আছে। যেতেই
হবে। তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।
- আমি তো ভেবেছি আজ যাবেন না অফিস।
অন্যমনস্ক অবস্থায় কথাটুকু শেষ করে রান্নাঘরে চলে
গেল। আজকে ভাপা পিঠা বানিয়েছে ফাতেমা। ইশ
কতদিন খাইনি। সাথে এত বাটি পায়েশও দিয়ে গেছে।
চুপচাপ ভালো ছেলের মতন খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
এভাবে কখনো পেট পুরে খাইনি। বাইরে ভাপা পিঠার
স্বাদ আর ঘরে বানানো ভাপা পিঠা বানানোর স্বাদের
মধ্যে পার্থক্য দেখলাম।
তাছাড়া বেশ ভালো পায়েশ তৈরি করতে পারে
ফাতেমা।
আজকে হয়তো নিজে ড্রাইভ করে যাবো না। মাথাটা
এখনো ঘুরছে। ড্রাইভার চাচাকে বললাম অফিসে নিয়ে
যাবার জন্য। নিচে নেমে দেখে তিনি গাড়ি নিয়ে
অপেক্ষা করছেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিচ থেকে ছাদের
উপরে তাকালাম, ফাতেমা ছাদ থেকে অপলক দৃষ্টিতে
আমাকে দেখছে। চোখাচোখি হবার আগেই চোখ
ফিরিয়ে নিলো।
.
ঢাকা শহরে জ্যামের অস্তিত্ব খুব বেশি। ১০মিনিট ধরে
জ্যামে আটকা পরে আছি। হঠাৎ চোখ গেল একটু দূরের
একটা রিকশায়। শ্রুতি মনে হচ্ছে, নাহ! কিছুক্ষণ ভালো
করে পরীক্ষা করে বুঝলাম ওটা শ্রুতি। তবুও চোখকে
অবিশ্বাস করে ফোন দিলাম শ্রুতিকে। আমি স্পষ্ট
দেখলাম ফোনটা বের করে কেটে দিলো।
শ্রুতির পাশে একটা ছেলে। ওরা দু'জনে খুব ক্লোসড
অবস্থায় ছিলো। আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরঝর বেয়ে
পড়লো। ছেলেটাকে আমি চিনি। ছেলেটা একবার আমার
অফিসে এসেছিলো ওর বাবার কোম্পানীর সাথে ডিল
করার জন্য।
ওর একটা কার্ড আমার কাছে থাকার কথা। অফিসে
পৌঁছে ছেলেটাকে আমার অফিসে আসার জন্য অনুরোধ
করলাম। যোহরের পর আসতে চাইলো। আমি অপেক্ষায়
আছি, রুমে ঢোকার পূর্বে আমার কাছে অনুমতি চাইলো।
আমি ওকে আসতে বললাম, কুশল বিনিময়ের পর,
- একটা কথা আপনার কাছে জানার ছিলো, যদি কিছু
মনে না করেন তো।
- বলেন, সমস্যা নেই।
- আসলে শ্রুতিকে আপনি কতদিন থেকে চেনেন?
- আমাদের রিলেশন দু'বছরের।
- রিলেশন বলতে?
- মানে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।
- ওহ
আমাদের কথা চলাকালীন মজিদ চাচা এসে কফি দিয়ে
গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে শ্রুতিও আমার অফিসে এসে
উপস্থিত। আমার পাশে ছেলেটাকে দেখে চমকে উঠলো।
আমি শ্রুতিকেও বসতে বললাম,
- তুমি খুব অবাক হচ্ছো তাই না শ্রুতি?
শ্রুতি কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে চুপ করে আছে।
ছেলেটাও বেশ অবাক হয়েছে শ্রুতিকে আমার অফিসে
আসতে দেখে।
- রোহান সাহেব কি হচ্ছে এসব? শ্রুতি, শ্রুতি এখানে
কেন?
- সেটা শ্রুতি ভালো জানে। জানেন তো, আমি
পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি গত একবছর হলো।
শ্রুতিকে ভালোবাসি বিধায় আমার স্ত্রীর গায়ে
একবার স্পর্শও করি নি। কিন্তু শ্রুতি আমাকে ঠকালো।
শ্রুতি আমি তোমাকে আর দেখতে চাই না। তুমি চলে
যাও, আর ছিয়াম সাহেব, হয়তো আমার সাথে শ্রুতি
অভিনয় করতে পারে কিন্তু আপনাকে সে সত্যি সত্যি
হয়তো ভালোবাসে। আপনারা দু'জন সুখী হন।
আমার কথা শুনে ছিয়াম সাহেব অবাক হয়েছেন। শ্রুতি
যে তাকেও ঠকিয়েছে। না জানি আরো কত ছেলেকে
এভাবে ঠকিয়েছে!
শ্রুতি চলে যাবার সময় পিছনে ফিরে একবার তাকিয়ে
কড়জোড়ে চোখের অশ্রু ফেলে বললো,
- আমাকে ক্ষমা করো রোহান। আমি তোমার সাথে
অন্যায় করেছি। তুমিও তো আমাকে বলোনি তুমি বিয়ে
করেও স্ত্রীর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করছো। যাইহোক, তুমি
তোমার স্ত্রীকে নিয়ে সুখে থেক।
আজ এই প্রথম শ্রুতির উপর প্রচণ্ড রাগ হলেও শেষ
বাক্যগুলো হৃদয়ে দুলছে। হৃদয়ের একপাশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে
গেছে। যার জন্য নিজের স্ত্রী থেকে দূরে সে কিনা
আমার সাথে ছল করেছে! ভাবতেই চোখ ঝরঝর করে অশ্রু
কনা ফ্লোর স্পর্শ করেছে।
.
বাড়িতে এসেই দেখলাম ফাতেমা আজ সোফায়
ঘুমিয়েছে। বুঝতে বাকি রইলো না ব্যাপারটা। আমি
অসুস্থ দেখে হয়তো বিছানায় শোয়ার অনুমতি দিয়েছে।
রাতের খাবার খেয়ে ছাদে গেলাম। এখনো চোখ দিয়ে
পানি ঝরছে।
এ পানি ঝরার কারণ শ্রুতি। এই মেয়েটাকে এত
ভালোবাসলাম, যার কারণে নিজের স্ত্রীর সাথে ছল
করলাম সে কিনা আজ!
আমি ভাবতে পারছি না। ফাতেমার সাথে খুব অন্যায়
করে ফেলেছি। মেয়েটা আমাকে ক্ষমা করবে কিনা
জানি নাহ। তবে ওর কাছে আমার ক্ষমা চাইতেই হবে।
আজকেই ওর ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিব। কিন্তু সে
তো ঘুমিয়ে পরেছে। মনে মনে দুষ্টুমি আঁটলাম।
সোজা ঘরে গিয়ে দেখলাম জানালা খোলা। চাঁদের মৃদু
আলো এসে পৌঁছেছে ফাতেমার শ্যামবর্ণ মুখখানায়।
আমি ওকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় শোয়ালাম।
মনে হয় টের পায়নি। আমি আলতো করে ওর ঠোঁটে আমার
ঠোঁট দু'টো রেখে হালকা স্পর্শ করে ভালেবাসা ছড়িয়ে
দিলাম।
আমার স্পর্শ পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে বসার চেষ্টা করে
ব্যর্থ হলো। কারণ ওর দু'হাত আমার দু'হাতে বন্ধি।
ভয়ার্ত চোখে বললো,
- কি করছেন আপনি?
- যা করছি ঠিক করছি।
- আপনার মনে হয় মাথা ঠিক নেই।
- আমি ঠিক আছি ফাতেমা।
শেষ ৪টা শব্দ উচ্চারণ করে আপাতত আমার আবদ্ধ থেকে
মুক্তি দিলাম। ফাতেমা বললো,
- আপনি আজ বিছানায় ঘুমাবেন। আপনি এখনো অসুস্থ।
আমি বরং সোফায় যাই।
ফাতেমা যাবার উপক্রম হবার সাথে সাথে আমি ওর
হাতটা ধরে কাছে টেনে নিলাম,
- এ কি করছেন রোহান বাবু?
ছলছল চোখে বললাম,
- ফাতেমা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি আমাকে
এত ভালোবাসো আর আমি তোমার ভালেবাসাকে
অগ্রাহ্য করে অন্য একটা.....!
কথাটা বলতেই থেমে গেলাম। আমি স্পষ্ট দেখলাম
ফাতেমা কাঁদছে। জানি না এ কান্না সুখের নাকি
দুঃখের।
- শ্রুতি বুঝি চলে গেছে?
আমি ফাতেমার কথায় চুপ করে রইলাম। ফাতেমা
কিছুক্ষণ বাদে বললো,
- আমি জানতাম রোহান বাবু, আমার স্বামী আমার কাছে
একদিন ঠিকই ফিরে আসবে। আমি আল্লাহকে খুব ভরসা
করি জানেন তো।
- তুমি আমায় ক্ষমা করেছো তো ফাতেমা?
- ছিহ! এভাবে বলবেন না প্লিজ।
- ফাতেমা খুব খুব ভালো মেয়ে। চলো না আমরা নতুন করে
একটা সোনার সংসার গড়ে তুলি? আর হ্যাঁ আজ থেকে
আপনি নয়, শুধু তুমি। তুমি শব্দটা তোমাকে আমার আরো
কাছে টানবে ফাতেমা।
ফাতেমা আমার বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। আমিও আমার
ভুল বুঝতে পেরে বাইরের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি।
একটা ভুল জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে মনটাকে
হালকা লাগছে।
এ রাতেই ফাতেমাকে পত্নীরুপে কাছে টেনে দু'জন
দু'জনার ভালেবাসায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। শেষরাতে
পবিত্রতা অর্জন করে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া স্বরুপ
দু'রাকাআত করে নামায পড়েছি।
(চলবে)
Comments
Post a Comment