ভালোবাসার গল্প।পর্ব ২
গল্প: ভালোবাসা
পর্ব:২
বাড়িতে জমকালো আয়োজন। বাবার মুখের উপর কথা
বলার আর সাধ্য হয়নি আমার। বাবার মায়া মাখানো
মুখখানার উপর বলার প্রয়াস ছিলো না যে আমি বিয়ে
করতে পারবো না।
আজই আমার বিয়ে। আমি বিয়ে করছি একথা শ্রুতি জানে
না। জানলে হয়তো ব্যাপারটা অন্যদিকে মোড় দিতো।
আমি বাবাকে শ্রুতির কথা বলতে পারি নি, এটা আমার
দুর্বলতা। বাবার গ্রাম্য বন্ধুর মেয়েকে না দেখেই
বিয়েতে মত দিয়েছি।
অবশ্য বাবা আমাকে বারবার কনে দেখার জন্য
বলেছিলেন। কিন্তু আমি নিজের থেকেই দেখিনি। শুধু
এতটুকু শুনেছি মেয়েটা শ্যামবর্ণের।
অনেকদিন পর বাড়ি ভর্তি মেহমান। বাবাকে খুব ব্যস্ত
মনে হচ্ছে। এদিক-সেদিক বারবার ঘোরাঘুরি করছেন।
আমি বন্ধুদের সাথে বসে আছি। আজ অনেকদিন বাদে
বাবার মুখে হাসি দেখছি, স্বর্গীয় হাসির রেখা।
এই হাসির জন্য শ্রুতির মতন মেয়েকে হয়তো বিসর্জন
দিয়ে গ্রাম্য একটা মেয়েকে বিয়ে করছি। তবে প্রথম
প্রেমকে আমি হয়তো ভুলতে পারবো না।
বাড়িটা রাজপ্রসাদের মতন সাজানো হয়েছে। চারদিকে
লাইটিং এ ভরপুর। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে আমার ঘর।
বুকের একপাশটা চিনচিন করছে। বিবেকের কাঠগড়ায়
দাঁড়িয়েছি। বিবেক আমাকে প্রশ্ন করছে আমি কি চাই?
বাবার হাসিমাখা মুখ চাই, নাকি শ্রুতির ভালোবাসা
চাই?
কিন্তু আমার জন্য দু'টোই প্রয়োজন। বাবার হাসিমাখা
মুখখানা যেমন আমার চলার পথের পাথেয় ঠিক তেমনি
সম্বল শ্রুতির ভালেবাসা আমার হৃদয়ের মন্দিরের
মণিকোঠায়।
বন্ধুদেরকে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে আমি
অন্ধকার ঘরে পরে রইলাম।
চোখ দিয়ে অঝোর নয়নে পানি ঝরছে। ইতিমধ্যে শ্রুতি
বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে, ইচ্ছে করেই রিসিভ
করিনি। এবার আর রিসিভ না করে থাকতে পারলাম না।
কিছুক্ষণ স্বাভাবিকভাবে কথা বলার পর কেটে দিয়ে
চোখ দু'টো বন্ধ করলাম। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
চোখ খুলে দেখি বাবা আমার খুব কাছে। বাবাকে দেখে
ধরপর করে বিছানায় বসে পড়লাম।
- বাবা তুমি? কখন এলে?
- এইতো কিছুক্ষণ, কি রে এভাবে ঘুমাচ্ছিসস কেন? মন
খারাপ?
- না বাবা মানে?
বাবা আমার হাতের উপর তার হাতটা রেখে শক্ত করে
রাখলেন।
- মায়ের জন্য মন খারাপ?
আমি কোন কথা না বলেই মাথা নিচু করে রাখলাম।
বাবা আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। ঘর
থেকে চলে যাবার সময় বলে গেলেন,
- পুকুরঘাটে হলুদ ছোঁয়া দিবে সবাই। তাড়াতাড়ি আয়
বাবা। গ্রাম তো অনেকদূরই। তাড়াতাড়ি রওয়ানা দিতে
হবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধুরা এসে লুঙি পরিয়ে দিলো।
গামছাটা গায়ের উপর ছড়িয়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে
চললো পুকুরঘাটে। বারবার শ্রুতিকে মনে পড়ছিলো।
.
জমজমাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে হলুদ ছোঁয়া পর্ব শেষ
হলো। সবাই আমাকে ঘিরে কত আনন্দ করছে, আর আমি মন
খারাপ করে বসে আছি। বাবাকে একটু আগে দেখলেও
এখন দেখতে পাচ্ছি না। গোসলের পর্ব শেষ করো
বাবাকে খুঁজতে লাগলাম। দেখি বাবা তার সেই ঘরে
কার সাথে যেন কথা বলছে।
আমি আড়ি পেতে শুনতে পেলাম বাবা মাকে উদ্দেশ্য
করে বলছে,
- জানো মায়া, আজকে আমাদের ছোট্ট রাজপুত্রের
বিয়ে। বাড়িতে কত আয়োজন! সবাই কত মজা করছে। তবুও
আমার কাছে তোমার শূন্যতা বিরাজমান। আজ সবকিছুই
আছে শুধু তুমি নেই। ওর জীবনের দ্বিতীয় প্রেক্ষাপটের
শুরুতে তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। আমাদের ছোট্ট
বাবুটা আজকে অন্যকারো হয়ে যাচ্ছে। জানো মায়া,
রোহান ঠিক তোমার মতই হয়েছে। বাবাকে সবসময় বুঝতে
পারে। তুমি ওকে দোয়া করো মায়া, যাতে ও যাকে
জীবনসাথী করে পাচ্ছে তাকে নিয়ে যেন সুখে থাকে।
বাবা কথাগুলো কেঁদে কেঁদে বলছিলেন। আমি কথাগুলো
শুনে খুব দ্রুত ঘরে গেলাম। বিয়ের পোশাক রাখা আছে।
সা'দ আর লিমন আমাকে কিছুটা সাহায্য করলো।
পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে অন্যান্য কাজগুলো শেষ
করতে থাকলাম।
আমার ফুফুমনি বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়ে গেছে।
সবাই কত ভালোবাসে আমাকে। অথচ আমি আছি শ্রুতির
স্মৃতি নিয়ে। হৃদয়ের দরজায় শ্রুতির ছবিটা বারবার
ভেসে উঠে বলছে,
'ঠকবাজ, আমাকে তুমি ঠকালে? আমার জীবন নিয়ে
ছিনিমিনি খেললে? আমি তো তোমায় ভালোবাসতে
চাই নি। তুমিই প্রোপোজ করেছিলেন প্রথম। তবে কেন?'
এসব ভাবতে ভাবতে বাবা ঘরে ঢুকলেন, আমি বাবাকে
দেখে চোখের পানি মোছার চেষ্টা করলাম।
বাবা বেশি কিছু টের পেলেন না। বিয়ের মুকুটটা আমার
মাথায় পরিয়ে দিয়ে হাসার চেষ্টা করলেন। মুচকি হেসে
বললেন, 'বাহ! আমার ছোট্ট রাজপুত্রকে তো অনেক সুন্দর
লাগছে।'
বাকিটা বাবা সাজিয়ে দিয়ে নিচে নিয়ে চললেন। এই
অমতের বিয়েতে একমাত্র প্রাপ্তি বাবার মুখের হাসি।
আমি যতটা অসুখী বাবাকে তারচেয়েও বেশি সুখী মনে
হচ্ছে।
আমি বাবার সাথে এক পা দু'পা করে নিচে নেমে
গাড়ির দিকে অগ্রসর হলাম। গাড়িগুলোও বর্ণিল রঙে
সাজিয়েছে। ঘটা করে সাজিয়েছে আমার গাড়িটা।
আমি গাড়িতে উঠে বসলাম, বাবা আমার ডানদিকে
বসলেন। ফুফুমনি আমার বামদিকে বসলেন। একে একে সব
গাড়ি ছেড়ে দিলো। বাবা একেরপর এক কথা বলেই
যাচ্ছেন। আমার বাবা হলেও বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
আমাদের মধ্যে।
বাবা মায়ের সাথে তার বিয়ের কয়েকটা মজার স্মৃতি
গাড়ির মধ্যেই বলে ফেললো। হাস্যকর ছিলো বলে আমি
মন খারাপের মধ্যেই হেসেছিলাম। ফুফুমনি বাবাকে
থামতে বলে বাবা থেমেছেন নতুবা গড়গড় করে আরো
কিছু বলতেন শিউর।
.
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ফাতেমা। বাবা যতটা
বলেছেন তার থেকে মেয়েটা বেশ ভালো। মেয়েটা
বাসর ঘরে বসে আছে। আমি মুকুটটা খুলে ছাদে গেলাম।
সবকিছু ঠিকঠাক মিটে গেছে। ফাতেমাকে কিছুই
বলিনি।
বাবা হয়তো শত ব্যস্ততা শেষ করে ঘুমিয়ে গেছেন। আমি
ছাদে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশে মাকে খোঁজার চেষ্টা
করছি। শ্রুতিকে যেমন মনে পড়েছিল ঠিক তেমনি মায়ের
কথাও মনে পড়ছিলো।
হয়তো মা বেঁচে থাকলে তার সাথে সব কিছু শেয়ার
করতে পারতাম কিন্তু তিনি তো আমাকে জন্ম দিয়েই সব
দায়িত্ব চুকিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। রাতের
আকাশটা বেশ লাগছিলো। হালকা বাতাসে মনটা সতেজ
লাগছিলো।
নাহ! আর থাকা যাবে না। ফাতেমাকে সব কথা বলতে
হবে। মেয়েটা হয়তো এখনো ঘুমায়নি।
যা সন্দেহ করেছিলাম তাই সঠিক হলো। দেখলাম লম্বা
ঘোমটা টেনে শতফুলের মাঝে বসে বসে হয়তো তার
প্রিয়তমের জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি কার কাছে গিয়ে বসলাম। ফাতেমা একটু নড়েচড়ে
বসে আমাকে সালাম দিলো।
আমি সালামের জবাব দিয়ে সবটা ওকে বুঝিয়ে বললাম।
আমার কথাগুলো শুনে ফাতেমা ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে
লাগলো। আমি ওকে চুপ করে থাকতে বললাম।
ফাতেমা বললো,
- আপনার ভালোবাসার মানুষের জন্য কেন আমাকেই
শাস্তি দিচ্ছেন? আপনি তো আগে আমাকে বলতে
পারতেন।
- আমি বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারি
নি। বাবা যতদিন বেঁচে আছে ততদিন তুমি এখানে বউয়ের
মতো থেক। তোমার কাছে এটাই আমার আরজি। আশা
করি সেটা তুমি ফেলবে না।
- আপনি আমার স্বামী, বিয়ে যখন করেছেন তখন আমিই
আপনার স্ত্রী। আপনি যা বলবেন সেটাই হবে। তবে আমি
নিরাশ হবো না। কারণ আল্লাহ কাউকে নিরাশ করেন
না।
মেয়েটার কথা শুনে ইসলামীক মাইন্ডের মনে হলো। আমি
যা চাই কার সবকিছুই পেলাম। শুধু তাকেই ভালোবাসতে
পারবো না। আমার ভালোবাসা শুধু শ্রুতির জন্য। আমার
প্রথম ভালোবাসার জন্য।
আমি পাঞ্জাবি পরিবর্তন কর সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম।
ফাতেমাকে দেখলাম তাহাজ্জুদ পড়তে। তাহাজ্জুদ পড়ে
সেও ঘুমিয়ে পড়লো। আমি বুঝতে পেলাম বাসর ঘরে
আমার এই কথাগুলো তাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে।
কিন্তু তাকে তো মিথ্যা আশা দিবো রাখতে পারবো
না। একটা মেয়ে বাসর ঘরে তার স্বামীর ছোঁয়া চায়,
ভালোবেসে কাছে পেতে চায়, ভালোবাসায় হারিয়ে
যেতে চায়। কিন্তু এসবের পরিবর্তে তাকে নিজের কাছ
থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম।
(চলবে)
আরও পড়ার জন্য:ভালোবাসা গল্প।পর্ব ১
পর্ব:২
বাড়িতে জমকালো আয়োজন। বাবার মুখের উপর কথা
বলার আর সাধ্য হয়নি আমার। বাবার মায়া মাখানো
মুখখানার উপর বলার প্রয়াস ছিলো না যে আমি বিয়ে
করতে পারবো না।
আজই আমার বিয়ে। আমি বিয়ে করছি একথা শ্রুতি জানে
না। জানলে হয়তো ব্যাপারটা অন্যদিকে মোড় দিতো।
আমি বাবাকে শ্রুতির কথা বলতে পারি নি, এটা আমার
দুর্বলতা। বাবার গ্রাম্য বন্ধুর মেয়েকে না দেখেই
বিয়েতে মত দিয়েছি।
অবশ্য বাবা আমাকে বারবার কনে দেখার জন্য
বলেছিলেন। কিন্তু আমি নিজের থেকেই দেখিনি। শুধু
এতটুকু শুনেছি মেয়েটা শ্যামবর্ণের।
অনেকদিন পর বাড়ি ভর্তি মেহমান। বাবাকে খুব ব্যস্ত
মনে হচ্ছে। এদিক-সেদিক বারবার ঘোরাঘুরি করছেন।
আমি বন্ধুদের সাথে বসে আছি। আজ অনেকদিন বাদে
বাবার মুখে হাসি দেখছি, স্বর্গীয় হাসির রেখা।
এই হাসির জন্য শ্রুতির মতন মেয়েকে হয়তো বিসর্জন
দিয়ে গ্রাম্য একটা মেয়েকে বিয়ে করছি। তবে প্রথম
প্রেমকে আমি হয়তো ভুলতে পারবো না।
বাড়িটা রাজপ্রসাদের মতন সাজানো হয়েছে। চারদিকে
লাইটিং এ ভরপুর। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে আমার ঘর।
বুকের একপাশটা চিনচিন করছে। বিবেকের কাঠগড়ায়
দাঁড়িয়েছি। বিবেক আমাকে প্রশ্ন করছে আমি কি চাই?
বাবার হাসিমাখা মুখ চাই, নাকি শ্রুতির ভালোবাসা
চাই?
কিন্তু আমার জন্য দু'টোই প্রয়োজন। বাবার হাসিমাখা
মুখখানা যেমন আমার চলার পথের পাথেয় ঠিক তেমনি
সম্বল শ্রুতির ভালেবাসা আমার হৃদয়ের মন্দিরের
মণিকোঠায়।
বন্ধুদেরকে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে আমি
অন্ধকার ঘরে পরে রইলাম।
চোখ দিয়ে অঝোর নয়নে পানি ঝরছে। ইতিমধ্যে শ্রুতি
বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে, ইচ্ছে করেই রিসিভ
করিনি। এবার আর রিসিভ না করে থাকতে পারলাম না।
কিছুক্ষণ স্বাভাবিকভাবে কথা বলার পর কেটে দিয়ে
চোখ দু'টো বন্ধ করলাম। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
চোখ খুলে দেখি বাবা আমার খুব কাছে। বাবাকে দেখে
ধরপর করে বিছানায় বসে পড়লাম।
- বাবা তুমি? কখন এলে?
- এইতো কিছুক্ষণ, কি রে এভাবে ঘুমাচ্ছিসস কেন? মন
খারাপ?
- না বাবা মানে?
বাবা আমার হাতের উপর তার হাতটা রেখে শক্ত করে
রাখলেন।
- মায়ের জন্য মন খারাপ?
আমি কোন কথা না বলেই মাথা নিচু করে রাখলাম।
বাবা আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। ঘর
থেকে চলে যাবার সময় বলে গেলেন,
- পুকুরঘাটে হলুদ ছোঁয়া দিবে সবাই। তাড়াতাড়ি আয়
বাবা। গ্রাম তো অনেকদূরই। তাড়াতাড়ি রওয়ানা দিতে
হবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধুরা এসে লুঙি পরিয়ে দিলো।
গামছাটা গায়ের উপর ছড়িয়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে
চললো পুকুরঘাটে। বারবার শ্রুতিকে মনে পড়ছিলো।
.
জমজমাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে হলুদ ছোঁয়া পর্ব শেষ
হলো। সবাই আমাকে ঘিরে কত আনন্দ করছে, আর আমি মন
খারাপ করে বসে আছি। বাবাকে একটু আগে দেখলেও
এখন দেখতে পাচ্ছি না। গোসলের পর্ব শেষ করো
বাবাকে খুঁজতে লাগলাম। দেখি বাবা তার সেই ঘরে
কার সাথে যেন কথা বলছে।
আমি আড়ি পেতে শুনতে পেলাম বাবা মাকে উদ্দেশ্য
করে বলছে,
- জানো মায়া, আজকে আমাদের ছোট্ট রাজপুত্রের
বিয়ে। বাড়িতে কত আয়োজন! সবাই কত মজা করছে। তবুও
আমার কাছে তোমার শূন্যতা বিরাজমান। আজ সবকিছুই
আছে শুধু তুমি নেই। ওর জীবনের দ্বিতীয় প্রেক্ষাপটের
শুরুতে তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। আমাদের ছোট্ট
বাবুটা আজকে অন্যকারো হয়ে যাচ্ছে। জানো মায়া,
রোহান ঠিক তোমার মতই হয়েছে। বাবাকে সবসময় বুঝতে
পারে। তুমি ওকে দোয়া করো মায়া, যাতে ও যাকে
জীবনসাথী করে পাচ্ছে তাকে নিয়ে যেন সুখে থাকে।
বাবা কথাগুলো কেঁদে কেঁদে বলছিলেন। আমি কথাগুলো
শুনে খুব দ্রুত ঘরে গেলাম। বিয়ের পোশাক রাখা আছে।
সা'দ আর লিমন আমাকে কিছুটা সাহায্য করলো।
পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে অন্যান্য কাজগুলো শেষ
করতে থাকলাম।
আমার ফুফুমনি বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়ে গেছে।
সবাই কত ভালোবাসে আমাকে। অথচ আমি আছি শ্রুতির
স্মৃতি নিয়ে। হৃদয়ের দরজায় শ্রুতির ছবিটা বারবার
ভেসে উঠে বলছে,
'ঠকবাজ, আমাকে তুমি ঠকালে? আমার জীবন নিয়ে
ছিনিমিনি খেললে? আমি তো তোমায় ভালোবাসতে
চাই নি। তুমিই প্রোপোজ করেছিলেন প্রথম। তবে কেন?'
এসব ভাবতে ভাবতে বাবা ঘরে ঢুকলেন, আমি বাবাকে
দেখে চোখের পানি মোছার চেষ্টা করলাম।
বাবা বেশি কিছু টের পেলেন না। বিয়ের মুকুটটা আমার
মাথায় পরিয়ে দিয়ে হাসার চেষ্টা করলেন। মুচকি হেসে
বললেন, 'বাহ! আমার ছোট্ট রাজপুত্রকে তো অনেক সুন্দর
লাগছে।'
বাকিটা বাবা সাজিয়ে দিয়ে নিচে নিয়ে চললেন। এই
অমতের বিয়েতে একমাত্র প্রাপ্তি বাবার মুখের হাসি।
আমি যতটা অসুখী বাবাকে তারচেয়েও বেশি সুখী মনে
হচ্ছে।
আমি বাবার সাথে এক পা দু'পা করে নিচে নেমে
গাড়ির দিকে অগ্রসর হলাম। গাড়িগুলোও বর্ণিল রঙে
সাজিয়েছে। ঘটা করে সাজিয়েছে আমার গাড়িটা।
আমি গাড়িতে উঠে বসলাম, বাবা আমার ডানদিকে
বসলেন। ফুফুমনি আমার বামদিকে বসলেন। একে একে সব
গাড়ি ছেড়ে দিলো। বাবা একেরপর এক কথা বলেই
যাচ্ছেন। আমার বাবা হলেও বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
আমাদের মধ্যে।
বাবা মায়ের সাথে তার বিয়ের কয়েকটা মজার স্মৃতি
গাড়ির মধ্যেই বলে ফেললো। হাস্যকর ছিলো বলে আমি
মন খারাপের মধ্যেই হেসেছিলাম। ফুফুমনি বাবাকে
থামতে বলে বাবা থেমেছেন নতুবা গড়গড় করে আরো
কিছু বলতেন শিউর।
.
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ফাতেমা। বাবা যতটা
বলেছেন তার থেকে মেয়েটা বেশ ভালো। মেয়েটা
বাসর ঘরে বসে আছে। আমি মুকুটটা খুলে ছাদে গেলাম।
সবকিছু ঠিকঠাক মিটে গেছে। ফাতেমাকে কিছুই
বলিনি।
বাবা হয়তো শত ব্যস্ততা শেষ করে ঘুমিয়ে গেছেন। আমি
ছাদে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশে মাকে খোঁজার চেষ্টা
করছি। শ্রুতিকে যেমন মনে পড়েছিল ঠিক তেমনি মায়ের
কথাও মনে পড়ছিলো।
হয়তো মা বেঁচে থাকলে তার সাথে সব কিছু শেয়ার
করতে পারতাম কিন্তু তিনি তো আমাকে জন্ম দিয়েই সব
দায়িত্ব চুকিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। রাতের
আকাশটা বেশ লাগছিলো। হালকা বাতাসে মনটা সতেজ
লাগছিলো।
নাহ! আর থাকা যাবে না। ফাতেমাকে সব কথা বলতে
হবে। মেয়েটা হয়তো এখনো ঘুমায়নি।
যা সন্দেহ করেছিলাম তাই সঠিক হলো। দেখলাম লম্বা
ঘোমটা টেনে শতফুলের মাঝে বসে বসে হয়তো তার
প্রিয়তমের জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি কার কাছে গিয়ে বসলাম। ফাতেমা একটু নড়েচড়ে
বসে আমাকে সালাম দিলো।
আমি সালামের জবাব দিয়ে সবটা ওকে বুঝিয়ে বললাম।
আমার কথাগুলো শুনে ফাতেমা ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে
লাগলো। আমি ওকে চুপ করে থাকতে বললাম।
ফাতেমা বললো,
- আপনার ভালোবাসার মানুষের জন্য কেন আমাকেই
শাস্তি দিচ্ছেন? আপনি তো আগে আমাকে বলতে
পারতেন।
- আমি বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারি
নি। বাবা যতদিন বেঁচে আছে ততদিন তুমি এখানে বউয়ের
মতো থেক। তোমার কাছে এটাই আমার আরজি। আশা
করি সেটা তুমি ফেলবে না।
- আপনি আমার স্বামী, বিয়ে যখন করেছেন তখন আমিই
আপনার স্ত্রী। আপনি যা বলবেন সেটাই হবে। তবে আমি
নিরাশ হবো না। কারণ আল্লাহ কাউকে নিরাশ করেন
না।
মেয়েটার কথা শুনে ইসলামীক মাইন্ডের মনে হলো। আমি
যা চাই কার সবকিছুই পেলাম। শুধু তাকেই ভালোবাসতে
পারবো না। আমার ভালোবাসা শুধু শ্রুতির জন্য। আমার
প্রথম ভালোবাসার জন্য।
আমি পাঞ্জাবি পরিবর্তন কর সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম।
ফাতেমাকে দেখলাম তাহাজ্জুদ পড়তে। তাহাজ্জুদ পড়ে
সেও ঘুমিয়ে পড়লো। আমি বুঝতে পেলাম বাসর ঘরে
আমার এই কথাগুলো তাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে।
কিন্তু তাকে তো মিথ্যা আশা দিবো রাখতে পারবো
না। একটা মেয়ে বাসর ঘরে তার স্বামীর ছোঁয়া চায়,
ভালোবেসে কাছে পেতে চায়, ভালোবাসায় হারিয়ে
যেতে চায়। কিন্তু এসবের পরিবর্তে তাকে নিজের কাছ
থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম।
(চলবে)
আরও পড়ার জন্য:ভালোবাসা গল্প।পর্ব ১
Comments
Post a Comment